জীবনে অনেক কঠিন সময় কাটিয়েছেন মো: আব্দুল মান্নান। ফার্ণিচারের দোকান থেকে বাইসাইকেল মেকার। পরিবারের সকলকে নিয়ে ভালোই ছিলেন তারা। তার পিতা ছিলেন সুনামধন্য এক মুদি দোকানদার। সেই ব্যবসা করেই, জমি জমা করেছিলেন। কিন্তু সমাজের অসৎ মোড়লদের কারণে সব কিছু থেকে বঞ্চিত করে তাদের বের করে দেয় ভাঁড়রা ইউনিয়ন থেকে। এলাকা থেকে চলে আসতে বাধ্য হয়।
অনেকটা অসহায়ভাবে পাবনা সদরে মালঞ্চি ইউনিয়নের পার-গোবিদপুর চলে আসে। শুরু হয় আব্দুল মান্নানের জীবন যুদ্ধ। তার পিতার সাথে মনিহারির ব্যবসায় সময় দেওয়া শুরু করেন আব্দুল মান্নান। পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হয় তার। প্রবল ইচ্ছা আর পরিশ্রম করে তিনি জনপ্রিয় একজন শিক্ষক হয়েছেন। পিতার মনিহারির ব্যবসা ভালো না চলায় কাজ শিখেন বাইসাইকেল মেরামতে। ১৯৯৬ সালে তিনি পাবনা পৌর সদরের মাসুম বাজারে হোসেন মেকারের কাছে কাজ শিখে ১৯৯৭ সালে নিজেই বাইসাইকেল মেরামতের দোকান দেন।
তিনি নিয়মিত জাতীয় দৈনিক জনকণ্ঠ, ইনকিলাব পত্রিকাসহ বিভিন্ন ম্যাগাজিন ক্রয় করে পড়তেন কাজের ফাঁকে। বাইসাইকেল মেরামতের সময় তার সংখ্যতা হয় সমাজের শিক্ষিত এক শ্রেনীর মানুষের সাথে।
এই কাজ করার সময় ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতির অফিসে পিয়ন হিসাবে কাজ শুরু করেন। এর পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নবম শ্রেণিতে ২০০০ সালে ভর্তি হন। নবম শ্রেণিতে ভর্তির পর তৎকালীন পাবনার স্বনামধন্য রাডার কোচিং এ পিয়ন হিসাবে যোগদান করেন। রাডার কোচিং এ কাজ করার সময় ইমাম গাজ্জালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পিয়ন পদে চাকরি পান। রাডার কোচিং ও স্কুলে পিয়ন পদে কাজ করতে করতে তিনি ২০০৩ সালে প্রথম ডিভিশনে এস এস সি পাশ করেন।
২০০৪ সালে ইমাম গাজ্জালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তার পিয়ন পদের চাকরি এমপিও হয়৷ তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই ২০০৬ সালে এইচ এস সি পাশ করেন। পিয়ন পদে কাজ করতে করতেই তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০১৩ সালে বিএ পাশ করে একই বছরে শিক্ষক নিবন্ধন (১০ম) পরীক্ষায় উত্তর্ণী হয়।
নানা ঘাত প্রতিঘাত উপেক্ষা করে একই বিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন।
খুব অল্প দিনেই তিনি জনপ্রিয় শিক্ষক হিসাবে সুনাম অর্জন করেন। অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সাইমা সুলতানা বলেন, আমাদের মো: আব্দুল মান্নান স্যার সবার সেরা। আমাদের সকল শিক্ষার্থীর খোঁজ-খবর রাখেন। কারো কোনো বিষয়ে অসুবিধা হলে তিনিই সবার আগে আসেন তার তুলনা হয় না।
মো: আব্দুল মান্নান ২০১৭ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম এ পাশ করেন ও এল এল বি সম্পন্ন করেন। ২০২২ সালে তিনি বিএড পাশ করেন এবং এমএড পরীক্ষা দিয়েছেন ফলাফাল এখনো প্রকাশ হয়নি।
তিনি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িয়ে সমাজের পিঁছিয়েপড়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন পারফেক্ট কোচিং সেন্টার সেখান নামমাত্র বেতন নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করান তার কোচিং এ প্রায় ২শত শিক্ষার্থী ও ১৬ জন শিক্ষক রয়েছেন।
রোটারিয়্যাক্ট ক্লাবের মাধ্যমে তিনি সামাজিক কাজ শুরু করেন। প্রতিষ্ঠা করছেন ভূঁইয়া ফাউন্ডেশন দায়িত্ব পালন করছেন চেয়ারম্যান হিসাবে।
মো: আব্দুল মান্নানের মা ২০০৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ৩য়। তিনি ১৯৮৩ সালের ১৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন।
সোহেল রানা, পাবনা:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন