সর্বশেষ

ঐতিহাসিক রায়: জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে আপিল বিভাগের নির্দেশ

দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আজ, ১ জুন ২০২৫ তারিখে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ হাইকোর্টের দেওয়া নিবন্ধন বাতিল সংক্রান্ত রায়কে বাতিল ঘোষণা করে এই ঐতিহাসিক নির্দেশ দেন। এই রায় রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং জামায়াত কর্মীরা মহান রবের প্রতি শুকরিয়া আদায় করেছেন।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনে, যেখানে জামায়াতে ইসলামীও নিবন্ধিত হয়। তবে, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। এর ফলস্বরূপ, ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। পরবর্তীতে, ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে।

হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী আপিল বিভাগে আপিল করে। এক পর্যায়ে আপিলটি খারিজ হয়ে গেলেও, জামায়াত আপিল পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন জানায়। অবশেষে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সেই হাইকোর্টের রায় বাতিল করে জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিল। নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

আপিল বিভাগের এই রায়ের পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মহান আল্লাহর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, "আলহামদুলিল্লাহ! বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধনসংক্রান্ত হাইকোর্টের দেওয়া ন্যায়ভ্রষ্ট রায় আজ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ বাতিল ঘোষণা করেছে। মহান রবের দরবারে নতশিরে শুকরিয়া আদায় করি—আলহামদুলিল্লাহ, সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ।"

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, "পরবর্তী প্রক্রিয়া নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মহান রবের সাহায্য চাই—আমরা যেন দ্রুতই আমাদের পূর্ণ অধিকার ফিরে পাই। আমিন।" ডা. শফিকুর রহমান তার বিবৃতিতে এই রায়কে ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টির একটি পদক্ষেপ হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন।

আপিল বিভাগের এই নির্দেশের ফলে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ পুনরায় উন্মুক্ত হলো। এখন নির্বাচন কমিশনকে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। জামায়াত নেতারা আশা করছেন, দ্রুতই তারা তাদের পূর্ণ অধিকার ফিরে পাবেন এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারবেন। এই রায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন